মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর ২০২৫ - ১৮:৪৮
আমার দুই বছরের সন্তান মোবাইল আসক্ত — কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব?

আধুনিক যুগে স্মার্টফোন যেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই সহজলভ্য প্রযুক্তি যখন দুই বছরের শিশুর কাছেও খেলনার মতো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তখন বিপদ দেখা দেয়। শিশুর আচরণ ও মানসিক বিকাশে মোবাইলের অতিরিক্ত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবকই এখন প্রশ্ন করছেন— “কীভাবে ছোট্ট সন্তানকে মোবাইল আসক্তি থেকে রক্ষা করা যায়?” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যার মূল পরিবারেই, আর সমাধানও শুরু হয় পিতা-মাতার কাছ থেকে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: দুই বছর তিন মাস বয়সী শিশুর মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ আসলে পিতা-মাতার আচরণ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অনুকরণমূলক প্রভাবের ফল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায় হলো—
• মোবাইল ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট নিষিদ্ধ স্থান ও সময় নির্ধারণ করা

• যন্ত্রটির প্রাপ্যতা সীমিত করা

• এবং পিতা-মাতার সচেতন আচরণ ও মুখোমুখি যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।

হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন সাইয়েদ আলীরেজা তেরাশিয়ান, পরিবার ও বিবাহবিষয়ক পরামর্শক, এক প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন—
প্রশ্ন: আমার সন্তান দুই বছর তিন মাস বয়সী, সে মোবাইল ব্যবহারে অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর কারণ কী এবং কীভাবে বৈজ্ঞানিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

উত্তর: শিশুরা স্বভাবতই অনুকরণপ্রবণ। তারা চারপাশের আচরণ বিশ্লেষণ না করেই হুবহু অনুকরণ করে।

যখন তারা দেখে— মা সর্বদা মোবাইলে ব্যস্ত, বাবাও ফোনে কাজ করছেন, বড় ভাই বা বোন ফোনে গেম খেলছে, এমনকি অতিথিরাও মোবাইল হাতে রাখছেন তখন শিশুর কাছেও সেটি স্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় মনে হয়। অতএব, সমস্যার সমাধান শুরু করতে হবে নিজেদের আচরণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।

মোবাইল ব্যবহারের নিষিদ্ধ স্থান নির্ধারণ
পরিবারে স্পষ্টভাবে ঠিক করতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে বা স্থানে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। যেমন—খাবার টেবিলে বসে ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।

ধরা যাক, পরিবারের কেউ এক হাতে চামচ ধরেছেন, অন্য হাতে ফোন স্ক্রল করছেন—শিশু এটি দেখে মনে করে, এমন আচরণ স্বাভাবিক।

একইভাবে, শোবার ঘরে কিংবা পরিবারের সবাই একত্রে সময় কাটানোর মুহূর্তেও ফোন ব্যবহার না করাই ভালো।

মোবাইল ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ
যদি মোবাইল ব্যবহার করতেই হয়, তবে সেটি আগে থেকে পরিকল্পিত সময়ে করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, বাবা-মা দিনে আধা ঘণ্টা ফোন ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু তা করবেন তখনই যখন শিশু ঘুমাচ্ছে বা খেলায় ব্যস্ত— কখনোই নয়, যখন শিশু তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বা কথা বলছে।

এছাড়া, মোবাইল যেন শিশুর দৃষ্টিসীমায় সহজে না থাকে। অনেক পরিবার এ বিষয়ে অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে—যেমন, দরজার পাশে একটি বাক্স রেখে সবাই বাড়িতে ঢোকার আগে ফোন সেখানে রেখে দেয়। এভাবে ঘরের পরিবেশ শান্ত থাকে এবং শিশু ভুল আচরণের অনুকরণ থেকে বাঁচে।

সম্পর্কের অগ্রাধিকার: পরিবার না ফোন?
একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বিষয় হলো—পরিবারের সম্পর্কের অগ্রাধিকার সর্বদা পরিবারের সদস্যদের হওয়া উচিত, মোবাইলের নয়।

দুঃখজনকভাবে আজকাল অনেকেই ফোন বেজে উঠলে সামনাসামনি কথোপকথন মাঝপথে থামিয়ে কল রিসিভ করেন। এটি আসলে আমাদের সামনে থাকা মানুষটির প্রতি অসম্মান। যদি কলটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয়, কলকারী আবারও যোগাযোগ করবে; না হলে পরে কল ব্যাক করা যায়।

এমন পরিস্থিতি কল্পনা করুন—শিশু তার পিতামাতার সঙ্গে কথা বলছে, হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, আর পিতামাতা সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করলেন। তখন শিশুর মনে জন্মায়—“মোবাইল আমার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

ফলে সে ধীরে ধীরে নিজেকে কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শুরু করে এবং ভবিষ্যতে একই আচরণ অনুকরণ করে। পিতা-মাতাকে নিজেদের আচরণের মাধ্যমে শিশুকে দেখাতে হবে যে, পরিবারই সবসময় প্রথম অগ্রাধিকার। কারণ ছোট শিশুরা বিশ্লেষণ করতে পারে না; তারা যা দেখে তাই অনুসরণ করে।

সঠিক আচরণ দেখলে তারা সেটিই পুনরাবৃত্তি করবে,আর ভুল আচরণ দেখলে সেটিও অনুকরণ করবে। অতএব, শিশুর মোবাইল ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি হলো পিতা-মাতার সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং সঠিক উদাহরণ স্থাপন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha